নামাজ-রোজার মতোই জাকাত একটি ফরজ বিধান। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার শৃঙ্খলা ও সামাজিক ভারসাম্য অটুট রাখার জন্য জাকাত ফরজ করেছেন। সমাজের সব মানুষের আর্থিক সঙ্গতি সমান নয়। কেউ অনেক বিত্তবৈভবের অধিকারী হয় কেউ, বা এক বেলার খাবার জোগাড়ের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। আর্থিক এই বৈষম্য প্রাকৃতিক। কেউ চেষ্টা করেও তাকে বিলোপ করতে পারবে না। ইসলাম এক্ষেত্রে সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ বিধান দিয়েছে। ইসলাম সম্পত্তিতে মানুষের ব্যক্তিমালিকানা স্বীকার করে, কিন্তু সব সম্পদ কিছু ব্যক্তির কাছে সঞ্চয় করে রাখার অধিকার দেয় না। মেধা মনন ও যোগ্যতা দিয়ে কেউ অঢেল সম্পত্তির মালিক হতে পারে। কিন্তু বছরান্তে তার সম্পত্তিতে গরিব দুঃখী ও নিস্ব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এটা কুরআনের বিধান। আল্লাহর বিধান। কেউ যদি আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে বা উপেক্ষা করে তা হলে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।
নবীজি (সা.) এর ইন্তেকালের পর একশ্রেণির লোক জাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। তখন হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর খেলাফতকাল। খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) জাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। হজরত ওমর ফারুক (রা.) আশ^স্ত হতে পারছিলেন না। তিনি বললেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, যেই ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত নবী, তার সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় না। সে নিরাপদ হয়ে যায়। হজরত আবু বকর (রা.) হুংকার দিয়ে বললেন, যেই ব্যক্তি নামাজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে আমি তার সঙ্গে লড়াই করব। নবীজির সময় যারা জাকাত দিয়েছে তারা যদি উটের রশি দিতেও অস্বীকার করে আমি যুদ্ধ করব। আমি জীবিত থাকতে ইসলামের মধ্যে কোনো ক্ষতি সাধন হতে দেব না। পরে হজরত ওমর (রা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা হজরত আবু বকরের হৃদয় খুলে দিয়েছেন। নবীজির ইন্তেকালের পর প্রথম ফেতনা এটাই ছিল। হজরত আবু বকর (রা.) এর কঠোর পদক্ষেপে সে ফেতনা নির্মূল হয়।
জাকাত যদি কেউ অস্বীকার করে তা হলে তার ঈমান থাকবে না। সে কাফের হয়ে যাবে। আর কেউ যদি জাকাত আদায় না করে তা হলে সে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, ‘এবং যারা স্বর্ণ ও রুপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (সে দিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে। সুতরাং, এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ করো জমা করে রাখার’ (সুরা তাওবা : ৩৪-৩৫)